টপ মাইন্ড শেয়ারিং ব্র্যান্ড হতে চাই


সুব্রত রঞ্জন দাস

চিফ বিজনেস অফিসার, এসিআই মোটরস

টপ মাইন্ড শেয়ারিং ব্র্যান্ড হতে চাই

২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করা এসিআই মোটরস ২০১৬ বাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের পরিবেশক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও নজরকাড়া আউটলুকের কারণে পথচলার শুরুতেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা ব্র্যান্ড ইয়ামাহার ১২৫ সিসি থেকে ১৫০ সিসি পর্যন্ত বিভিন্ন মডেল ইতিমধ্যেই বাইকারদের মন জয় করেছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য ২৪ মাসের কিস্তিতে পছন্দের মডেল কেনার সুযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যন্ত্রাংশের দাম কমানোর পাশাপাশি সেবাধর্মী মানসিকতা নিয়ে বিক্রয়-পরবর্তী সার্ভিসিং নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে এসিআই মোটরস। কালের কণ্ঠ'র সিনিয়র রিপোর্টার আবুল কাশেমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইয়ামাহা মোটরসাইকেল ও বাইকারদের স্বার্থরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন এসিআই মোটরসের চিফ বিজনেস অফিসার সুব্রত রঞ্জন দাস

কালের কণ্ঠ : এসিআই মোটরসের মোটরসাইকেল ব্যবসায় আসার উদ্দেশ্য কী?

সুব্রত রঞ্জন দাস : এসিআই মোটরস বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে ভালো মানের মোটরসাইকেল তুলে দেওয়া ও দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। বাংলাদেশেও মোটরসাইকেলের সম্ভাবনা ব্যাপক। দেশের মোটরসাইকেলের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে। তবে এটিও যথেষ্ট নয়।

দেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী আরো বেশি মোটরসাইকেলের চাহিদা রয়েছে দেশে। ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মোটরসাইকেলের বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের বাজার আরো চার গুণ হওয়া উচিত ছিল। প্রতি হাজার জনসংখ্যা হিসাবে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। 'রেভস ইউর হার্ট' স্লোগান নিয়ে তরুণ ও যুবকদের গতি, আকাঙ্ক্ষা ও নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করে তাদের পাশে থাকতেই ইয়ামাহা মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছে এসিআই মোটরস।

কালের কণ্ঠ : প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ইয়ামাহার লক্ষ্য কী?

সুব্রত রঞ্জন দাস : ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাংলাদেশের সেরা মোটরসাইকেল। বাইকাররা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল ব্যবহার করলেও তাদের ভাবনায়ও ইয়ামাহা মোটরসাইকেলই সেরা। আমাদের চাওয়াও গ্রাহকের সেরা পছন্দের ব্র্যান্ড হওয়া। তবে মার্কেটে আমাদের অংশীদারি বাড়াতে চাই। গ্রাহকের 'মাইন্ড শেয়ারিং' বাড়াতে চাই। আমরা 'টপ সেলিং ব্র্যান্ড নয়, টপ মাইন্ড শেয়ারিং ব্র্যান্ড' হতে চাই।

কালের কণ্ঠ : ইয়ামাহার জনপ্রিয় মডেল কোনটি?

সুব্রত রঞ্জন দাস : ইয়ামাহা বিশ্বের মোটরসাইকেল জগতে সেরা দ্বিতীয় ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুনামধারী মোটরসাইকেল হলো ইয়ামাহা। এর বাহ্যিক গঠন, সার্বিক সক্ষমতা, সাসপেনশন ও কার্যকারিতা অন্য ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় অনেক কার্যকর ও চিত্তাকর্ষক। ১২৫ সিসি থেকে ১৫০ সিসি পর্যন্ত ইয়ামাহার সাতটি মডেল বর্তমানে বিপণন করছে এসিআই মোটরস। এখন যেসব মডেল বিক্রি হচ্ছে, তার সব কটিই জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছে।

কালের কণ্ঠ : মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে আপনাদের কোনো ভূমিকা আছে কী?

সুব্রত রঞ্জন দাস : ইয়ামাহা মোটরসাইকেল চালনায় আরাম ও ব্যালান্স অনেক ভালো। তবে বাইকারদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলো ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভারের দুটি অংশের সংযোগস্থলে স্টিলের পাতের মাঝে যে ফাঁক থাকে, তাতে চাকা আটকে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। খুব সহজেই ফ্লাইওভারগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া যায়।

ইয়ামাহা মোটরসাইকেল অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে এটির ব্যবহারকারীদের খুবই কম দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। ইয়ামাহা বিশ্বজুড়ে ব্রেকিং সিস্টেম ও ইকো ব্যালান্সের জন্য বিখ্যাত। তবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা দরকার। আমরা নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণ নিয়ে প্রচারাভিযান চালাচ্ছি। ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের ক্রেতাদের আমরা বিনা মূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে হেলমেট সরবরাহ করছি। ১৩০০ বাইকার নিয়ে 'ইউজ হেলমেট, রাইড সেফ' শিরোনামে শোভাযাত্রা করেছি। গ্রাহকদের সচেতনতা বাড়াতে আমাদের আরো অনেক কিছু করার পরিকল্পনা আছে।

কালের কণ্ঠ : ইয়ামাহার মূল ক্রেতা তরুণরা, কারণ কী?

সুব্রত রঞ্জন দাস : ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রি করার সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে বাইকার সার্কেল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। আগে তরুণ ও যুবকরা ক্লাব, সুস্থ ধারার রাজনীতি, পাঠচর্চাসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন এসব কর্মকাণ্ড নেই। তারা ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। এতে তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। তবে আশার কথা হলো, এখন দেশে ছোট ছোট বাইকার গ্রুপ হচ্ছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে। এসিআই মোটরস এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। বাইক চালানোর সঙ্গে মানুষের মন ও স্বাস্থ্যের সুস্থতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। জাপানের নাগরিকরা একাকিত্ব অনুভব থেকে আত্মহত্যা করছে। এটি দূর করতে দেশটির সরকার তার নাগরিকদের বাইক চালাতে উৎসাহ দিচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বাইক চালায় তারা দীর্ঘদিন সুন্দরভাবে বাঁচে। বর্তমানে বাইকারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আয়োজনের মতো অবকাঠামো দেশে নেই। দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনাও আছে আমাদের। বাইকারদের জন্য আমরা মোটো জিপি-এর আদলে ট্র্যাক করতে চাই।

কালের কণ্ঠ : মোটরসাইকেল সার্ভিসিংয়ে অনেক খরচ। সার্ভিসিং ব্যয় কমানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

সুব্রত রঞ্জন দাস : এসিআই মোটরস ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের সব ধরনের যন্ত্রাংশ বিক্রি করে। এ ক্ষেত্রে মুনাফার বদলে সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দিই আমরা। গ্রাহক সন্তুষ্টি আমাদের অগ্রাধিকার। একমাত্র আমরাই যেখান থেকে মোটরসাইকেল বিক্রি করি, সেখানেই সার্ভিসিং করি। বিক্রয়োত্তর তিন বছর বা ১২ হাজার কিলোমিটারে চারটা ফ্রি সার্ভিসিং সুবিধা দিই। ইয়ামাহা ডায়াগনস্টিক টুলস গড়ে তুলছি, যেখানে কম্পিউটারের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা হয়। এ ধরনের সুবিধা বাংলাদেশের আর কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। আমরা ঢাকার তেজগাঁও ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করছি, যা আগামী তিন মাসের মধ্যেই চালু হবে। আমরা গ্রাহকদের জন্য সার্ভিস কার্ডও চালু করব, যেখানে মূল্যছাড় থাকবে। যন্ত্রাংশ কিনলে সার্ভিস ফি নেওয়া হবে না—এ ধরনের ব্যবস্থাও থাকবে। মোটরসাইকেল সার্ভিসিং ফি কমাতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। যন্ত্রাংশের দাম ইতিমধ্যে কমিয়েছি। সার্ভিসিং থেকে আমরা কোনো মুনাফা করতে চাই না, গ্রাহকের সন্তুষ্টি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বিবেচনা করছি।

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের দাম অনেক বেশি। এটা কিভাবে নাগালে আনা সম্ভব?

সুব্রত রঞ্জন দাস : বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের উচ্চদরের কারণ উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা। ভারত নিজেরা মোটরসাইকেল উৎপাদন করে। তার পরও দেশটিতে মোটরসাইকেল আমদানিতে শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কহার ৯০ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে ১৫০ শতাংশ। মোটরসাইকেল আমদানিতে শুল্ক ১০০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলে মোটরসাইকেলের দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে নেমে আসবে।

Press Coverage Links: