ক্রেতাদের নিরাপদ ক্রয়ের ব্যবস্থা করছে স্বপ্ন


সাব্বির হাসান নাসির

নির্বাহী পরিচালক, এসিআই লজিস্টিক লিমিটেড

ক্রেতাদের নিরাপদ ক্রয়ের ব্যবস্থা করছে স্বপ্ন

এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির। এসিআইয়ের অন্যতম উদ্যোগ দেশের বৃহত্তম রিটেইল চেইনশপ ‘স্বপ্ন’ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তিনি। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে স্বপ্ন এবং দেশের সুপারশপ ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন তবিবুর রহমান.


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, বাংলাদেশেও এর প্রভাব দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে স্বপ্ন তাদের ক্রেতা ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে?
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের আউটলেটগুলোর সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। স্বপ্নের ক্রেতা ও কর্মীদের নিজের হাত পরিষ্কার করে ভেতরে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জনসমাগম যাতে না তৈরি হয়, সেজন্য কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে। আমরা আমাদের কর্মী ও ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে।


করোনাভাইরাসের প্রভাবে নিত্যপণ্যের বিক্রি বেড়েছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নিশ্চিতে স্বপ্ন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
নিত্যপণ্যের বিষয়ে বলব, আমরা কৃষক পর্যায় থেকে ধান সংগ্রহের পর চাল তৈরি করে বিক্রি করে থাকি। হঠাত্ করে চালের চাহিদা বৃদ্ধিতে আমরা সে পরিমাণ ধান সংগ্রহ করতে পারছি না। এ কারণে এখন মিলারের কাছ থেকে চাল কিনতে হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন মিলাররা। তাই বেশি টাকা দিয়ে চাল কেনার কারণে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতে আমরা চালের মিলারদের সঙ্গে আলোচনা করে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। এছাড়া ক্রেতারা যাতে বেশি চাল মজুদ করে না রাখতে পারে, সেজন্য একজন ক্রেতা পাঁচ কেজির বেশি চাল নিতে পারবে না, এমন নিয়ম চালু করে দিয়েছি। আমরা সব ধরনের ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে কাজ করছি।


বাংলাদেশে যদি কোনো সময় লকডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন নিত্যপণ্যের চাহিদা অনুযায়ী জোগান চিশ্চিতে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন?
এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে অবশ্যই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী জোগান নিশ্চিত করব। তবে যেসব এলাকা থেকে আমরা চাল বা অন্য পণ্য নিয়ে আসি; সেসব এলাকা লকডাউনের মধ্যেও যাতে পণ্যবাহী গাড়ি ঢাকায় আসতে পারে, এ ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। যেমন কুষ্টিয়া, দিনাজপুর থেকে চাল আসে। এসব এলাকায় লকডাউনের সময় অবশ্যই পণ্যবাহী গাড়ি আসতে দিতে হবে। সরকার যদি সে ব্যবস্থা না করতে পারে, তাহলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সরকারের উদ্দেশে বলব, লকডাউনের মধ্যেই সারা দেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসার সুবিধা রাখতে হবে। এর মধ্য দিয়েই দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা যারা সুপারশপ ব্যবসায়ী, তাদের সঙ্গে সরকারের বসা উচিত।


করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী সুরক্ষা পণ্যের (মাস্ক, হেক্সসল, স্যানিটাইজার) সংকট দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি অনেকগুলো উপকরণ মজুদ করে রাখছে। স্বপ্ন এ সংকট উত্তরণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কিনা?
হেক্সসল ও স্যানিটাইজার যেসব কোম্পানি উত্পাদন করছে, তাদের একটি উত্পাদনের লক্ষ্য থাকে। সে চাহিদা অনুযায়ী তারা পণ্য তৈরি করে। করোনার প্রভাবে হঠাত্ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সংকট দেখা দিয়েছে। হঠাত্ করেই তো এসব জোগান দেয়া সম্ভব নয়। প্রথম তিনদিন আমরা বুঝতে পারিনি। ক্রেতারা ইচ্ছামতো সংগ্রহ করেছে। যখন দেখছি অনেক ক্রেতা নিজেদের ইচ্ছামতো এটা মজুদ করে রাখছে। তখন থেকে আমরা এটার একটা নিয়ম করে দিয়েছি। একজন ক্রেতা একটির বেশি স্যানিটাইজার কিনতে পারবে না। এসব পণ্যের কাঁচামাল বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়। চাইলেই চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল পাওয়া সম্ভব নয়। তবে আমাদের কাছে যে পরিমাণ কাঁচমাল ছিল, সেটা দিয়েই প্রতিনিয়ত উত্পাদন বৃদ্ধি করেছি। এসিআই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকেও এসব পণ্য নিয়ে এসে স্বপ্নে বিক্রি করার ব্যবস্থা রেখেছি।


স্বপ্নে অনলাইনে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিক্রি বেড়েছে কিনা?
বর্তমান অবস্থায় অফ লাইনের মতো অনলাইনেও স্বপ্ন সুপারশপের বিক্রি বেড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে যদি সরকার দেশ লকডাউন করে দেয়, সেটা মাথায় রেখে আমরা আমাদের কর্মীর মাধ্যমে নিত্যপণ্য ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। অনলাইন ও হোম ডেলিভারি টিমকে আরো শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এখনো বাংলাদেশে অনলাইন মার্কেটে বেচাকেনা অনেক কম। তরুণরা কিছুটা আগ্রহ তৈরি করেছে। মধ্য বয়সীরা এখন এ বিষয়ে ততটা আগ্রহী নয়।


সুপারশপ থেকে সরকার ৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়ে থাকে, যদিও একই পণ্যে মুদিদোকানিদের কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। এ অবস্থায় সুপারশপ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনা করা চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে কি?
ভ্যাট মওকুফের দাবি আমাদের সবসময় ছিল, এখনো আছে। এ বিষয়ে আমরা অনেকবার অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। তিনি একেবারে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন তা কিন্তু নয়। তবে কোনো এক অদৃশ্য কারণে আমাদের দাবি পূরণ হচ্ছে না। আমার বুঝে আসে না কেন সুপারশপ ব্যবসা পরিচালনা করতে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে?


দিন দিন সুপারশপমুখী হচ্ছে মানুষ, এক্ষেত্রে বর্তমানে স্বপ্নের অবস্থা কেমন?
সুপারশপের বাজারে স্বপ্নের অবস্থা অনেক ভালো। স্বপ্ন এখন এ মার্কেটের লিডার, চার-পাঁচ বছর ধরে আমরা এ মার্কেটটাকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছি। গত বছর আন্তর্জাতিকসহ দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে স্বপ্নের অবস্থান ছিল অষ্টম। এর কারণ একটাই, আমরা জনগণের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় জনগণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে কাজ করি।


স্বপ্ন পণ্যের মান নিশ্চিতে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে?
পণ্যের মান নিশ্চিতে আমাদের শক্ত একটি টিম কাজ করে। তারা প্রতিনিয়ত স্বপ্নের পণ্যে মান নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় রেখে আমরা মাংস বিক্রি করি। উত্স পর্যায়ে শাকসবজি সংগ্রহ করা হয় ভালো মানের দেখে। আউটলেটে প্রবেশের আগে আবার দেখে নেয়া হয় পণ্যের মান ঠিক আছে কিনা। কোনো সবজি পচে যাচ্ছে কিনা, সেটাও আমরা দেখি।


পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এসিআইয়ের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি স্বপ্ন প্রতি বছর লোকসান করছে। এ থেকে উত্তরণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন কিনা?
এসিআই গ্রুপের যদি আর্নিংস কমে গিয়ে থাকে, তাহলে তার জন্য অন্য সাবসিডিয়ারি ইউনিটগুলো দায়ী। তাদের প্রফিট কমে গেছে বলে ওভারঅল প্রফিট কমে গেছে। এসিআই অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা ইউনিটের ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে বুঝবেন কোন ইউনিট থেকে লোকসান বেড়েছে। কিন্তু স্বপ্নের কারণে এসিআইয়ের মুনাফা কমে যায়নি। এবার আসেন অন্যান্য ইউনিটের মুনাফা কমেছে কেন? ব্যাংকের ইন্টারেস্ট বেড়ে যাওয়াটা একটা বড় কারণ। এছাড়া অন্য কোনো কারণে লোকসান হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। ডিপ্রেশন একটা কারণ হতে পারে, এক্সচেঞ্জ রেট একটা ব্যাপার হতে পারে। এখন বলি, স্বপ্ন যে লোকসান করছে তা থেকে উত্তরণের উপায় কী? এটা নিয়ে কী চিন্তা করছে এসিআই? আপনারা একটা জিনিস দেখবেন। ভ্যালু ক্যাপচার করার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাইস অ্যাডজাস্ট করেছি। আমাদের মার্কেট শেয়ার বাড়তে থাকায় আমরা সাপ্লায়ারদের সঙ্গে বেটার নেগোশিয়েট ইম্প্রুভ করতে পেরেছি। আমাদের পরিচালন লোকসান গত এক বছরে অনেকটা কমে গেছে। লোকসান কমাতে আন্তর্জাতিক মানের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের লোন কমিয়ে আনতে চেষ্টা করছি। এর প্রভাব আপনারা হয়তো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেই পেয়ে যাবেন। হয়তো পুঁজিবাজারে একটা ভালো খবর আসতে পারে কিছুদিনের মধ্যে।


করোনার প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন?
স্বপ্ন সবসময় অন্যান্য ব্যবসায়ীর চেয়ে কম দামে ক্রেতাদের হাতে পণ্য তুলে দেয়ার চেষ্টা করে। যদি ডিলার পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। হঠাত্ করে চাহিদা বেড়ে গেলে আমরা এসব পণ্য ডিলার থেকে নিয়ে আসি। তারা যদি দাম বৃদ্ধি করেন, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে ডিলার পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা।